পর্যটন বিকাশে অপার সম্ভাবনাময় জনপদ লংগদু

রাঙ্গামাটি জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা লংগদু। পর্যটন শিল্প বিকাশে এ উপজেলাকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। লংগদু উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলোঃ

‎বনশ্রী রেস্ট হাউসঃ লংগদু উপজেলার প্রাচীন পর্যটন  বনশ্রী রেস্ট হাউস। মাইনিমূখে অবস্থিত এ রেস্ট হাউসটি গাছপালায় পরিপূর্ণ। প্রচন্ড গরমেও স্বস্তি অনুভব করা যায় এখানে। ভরা মৌসুমে এখান থেকে কাপ্তাই লেকের জলারাশি, জেলেদের মাছ ধরায় দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাগানো বকুল গাছটি এখন বৃহৎ আকার ধারণ করেছে।

‎রাবেতা এগ্রো প্রজেক্টঃ লংগদু উপজেলার মাইনিমূখ  ইউনিয়নে রাবেতা এগ্রো প্রজেক্ট অবস্থিত। বিশাল এলাকা নিয়ে ফলজ বাগান এটি। ছায়াঘেরা পরিবেশের মাঝে রয়েছে স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল। গাছের চারা ও ফুল কেনার জন্য রয়েছে নার্সারি। থাকার জন্য রয়েছে রেস্ট হাউস। থাকতে হলে কর্তৃপক্ষের সাথে আগেই যোগাযোগ করতে হবে। বেড়ানোর জন্য এ স্থানটি চমৎকার।

‎বৈচিত্র্য বিলাসঃ লংগদু সেনাজোন কর্তৃক পরিচালিত বৈচিত্র্য বিলাস পার্কটি। এ উপজেলায় বিনোদনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত পার্ক এটি। পার্কের ভেতরে রয়েছে সুন্দর বসার স্থান, ছোটদের খেলনা, মিনি চিড়িয়াখানা, নৌকায় চড়ার ব‍্যবস্থাসহ বিনোদনের নানা রকম ব‍্যবস্থা। প্রতিদিনই বিনোদন প্রেমিদের উপস্থিতিতে  মুখর থাকে এ পার্কটি। এছাড়া রয়েছে খাবারের জন্য ক‍্যাফে। গাছের উপর ঘরে বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি খাবারও উপভোগের সুযোগ।

‎বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সঃ ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান ও প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স। লংগদু উপজেলার গাঁথাছড়ায় অবস্থিত এ কমপ্লেক্স।  এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থাপনা সমুহ যেকোনো দর্শনার্থীকে বিমোহিত করবে। লংগদু উপজেলায় বেড়াতে আসলে এ কমপ্লেক্স বেড়ানোর জন্য আদর্শ স্থান।

‎তিনটিলা বন বিহারঃ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের কাছে তিনটিলা বন বিহার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। লংগদু উপজেলা সদরের সন্নিকটে এটি অবস্থিত। এই স্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থাপনা সমুহ মনে ভালো লাগা এনে দেবে। গাঁথাছড়া-মাইনিমুখ সেতুঃ বিকেল বেলা অবসর কাটানোর আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে এ সেতুটি। কাচালং নদীর শীতল হাওয়া, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের আর্কষনীয় স্থান এ সেতু। রাতের বেলা সোলার লাইট গুলো সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ সেতুটি হতে পারে বিকেল বেলা অবসর কাটানোর উত্তম স্থান।

‎কাট্টলি বিলঃ কাপ্তাই লেকের জলরাশির বিশাল একটি অংশ জুড়ে রয়েছে কাট্টলি বিল। লংগদু উপজেলায় এ বিলের  অধিকাংশ জুড়ে অবস্থান। এ বিলকে বলা হয় মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। শীতের মৌসুমে থাকে অতিথি পাখির আনাগোনা। প্রকৃতি প্রেমিদের এ বিল হতে পারে আনন্দের অনাবিল উৎস।

‎ওয়াচ টাওয়ারঃ লংগদু উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কাট্টলি বাজারের সন্নিকটে মাইজ্জার কিলায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। টাওয়ারের ছাদে সোলার লাইট স্থাপন করা হবে। পর্যায়ক্রমে পর্যটনের সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযুক্ত করা হবে বলেও জানা গেছে।

‎এ ওয়াচ টাওয়ারটি নির্মিত হলে এখান থেকে উপভোগ করা যাবে কাপ্তাই লেকের বিশাল জলরাশি, মাছ ধরার দৃশ্য এবং পাওয়া যাবে প্রকৃতির নিখাদ সান্নিধ্য।

‎গুরু সতাং পাহাড়ঃ লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নে গুরু সতাং পাহাড়ের অবস্থান। দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরকে চুম্বকের মতো টেনে আনার সব সৌন্দর্যগুণই আছে এই পাহাড়ের। তবে আজও লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে পাহাড়টি।

‎ যোগাযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে এ স্থানটি হতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

‎এছাড়া এ উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। ইকো ট্যুরিজমের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বেসরকারিভাবে এ উপজেলায় পর্যটনের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্দ‍্যোক্তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। দরকার পর্যটকদের জন্য আরো সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারলে এ খাতে তৈরি হতে পারে কর্মসংস্থানের ব‍্যপক সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *