ঢাকা, ১১ জুন ২০২৫: পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ ও বিক্রিতে এবারও ব্যাপক অসঙ্গতি এবং হতাশা দেখা গেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ফড়িয়ারা। এতে দেশের চামড়া শিল্পে অস্থিরতা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।ঈদ পরবর্তী সময়ে সারাদেশে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে নেমেছিলেন হাজার হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী। প্রতিটি মহল্লা, গ্রাম ও বাজার থেকে তারা চামড়া সংগ্রহ করেন এই আশায় যে, ট্যানারি মালিক বা বড় আড়তদারদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে কিছু লাভ করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ঢাকার পোস্তা, চট্টগ্রামের আতুরার ডিপোসহ দেশের বিভিন্ন চামড়া ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম দাম হাঁকাচ্ছেন আড়তদার ও ট্যানারি প্রতিনিধিরা।একজন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী, মো. সালাম মিয়া, যিনি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় চামড়া নিয়ে এসেছেন, ফোরকান বার্তাকে বলেন, “আমরা অনেক আশা নিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। সরকার নির্ধারিত প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম যেখানে ঢাকার বাইরে ৫০-৫৫ টাকা, সেখানে আমাদের ৩০-৩৫ টাকা দাম বলা হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলে আমাদের তো লস হচ্ছেই, উল্টো পরিবহন খরচও উঠবে না।”অন্যদিকে, ট্যানারি মালিকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা এবং মূল্য স্থিতিশীল না থাকায় তাদের পক্ষে বেশি দামে চামড়া কেনা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল আহমেদ জানান, “আমরা গুণগত মানসম্পন্ন চামড়া সংগ্রহ করছি। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন না, যার কারণে চামড়ার মান কমে যায় এবং সেগুলোর দাম কম হয়।”তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের একটি সিন্ডিকেট প্রতি বছরই চামড়া সংগ্রহের মৌসুমে দাম কমিয়ে দেয়, যার ফলে প্রান্তিক বিক্রেতা ও ফড়িয়ারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এর ফলে কাঁচা চামড়ার একটি বড় অংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়, যা দেশের সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই সমস্যার সমাধানে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।